সকালের নাশতা খেয়ে মায়ের কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে বের হয়েছিলেন রিফাত শরীফ। বাজারে দেখা হয় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সঙ্গে। দুজন একসঙ্গে যান মিন্নির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরগুনা সরকারি কলেজে।
ঘণ্টা দেড়েক পর কলেজ থেকে বের হতেই ধারালো অস্ত্র নিয়ে রিফাতের ওপর হামলা করে পুলিশের তালিকাভুক্ত অপরাধী সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে ‘নয়ন বন্ড’ ও রিফাত ফরাজীসহ কয়েকজন। তাদের মধ্যে নয়ন ও রিফাত ধারালো অস্ত্র হাতে সরাসরি অংশ নেয়।
এ সময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের সহযোগীরা। খুনিচক্রের ৫ মিনিটের নৃশংসতায় রিফাত শরীফের শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তারা রিফাতের শরীরে বেশ কয়েকটি কোপ দেয়; এরমধ্যে ৮টি কোপ ছিলো গুরুতর। জীবন বাজি রেখে খুনিদের হাত থেকে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন মিন্নি। হামলার পর খুনিরা সদর্পে স্থান ত্যাগ করে।
বুধবার এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও রিফাতকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি চলে এক সপ্তাহ ধরে। সর্বশেষ, হামলার আগের রাতে অর্থাৎ মঙ্গলবার রাতে খুনের চূড়ান্ত ছক কষা হয়; আর এর পরদিন সকালেই তা নির্মমভাবে বাস্তবায়ন করে খুনিরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী বুধবার সকাল থেকেই রিফাত শরীফের গতিবিধি রেকি করা হয়। রিফাতের মৃত্যুর খবরে পেয়েই গা-ঢাকা দেয় খুনিরা।
প্রেমঘটিত কোনো বিষয়ে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। রিফাত পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার বলে দাবি করছেন রিফাত ও মিন্নির স্বজনরাও। গতকাল রিফাত ও মিন্নির পরিবার, লাশের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক এবং তদন্তসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। খুনের নৃশংস বর্ণনা দিয়েছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নি।
দেশব্যাপী আলোচিত এ খুনের ঘটনায় আটজনের নাম উল্লেখসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে হত্যামামলা দায়ের করেছেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বরগুনা থানায় এ মামলা করা হয়। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাব্বির নয়নকে। নানা অপকর্মের জন্য তিনি এলাকায় ‘নয়ন বন্ড’ নামে পরিচিত। এজাহারে দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী; তিন রিশান ফরাজী, চার নম্বর আসামি হলেন চন্দন।
রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটা পর্যন্ত পুলিশ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে এজাহারভুক্ত ৪ নম্বর আসামি চন্দনকে (২১) বুধবার গভীর রাতে এবং ৯ নম্বর আসামি মেহেদী হাসানকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয় গতকাল দুপুরে। প্রায় একই সময়ে সন্দেহভাজন আসামি নাজমুল আহসান ও মহারাজকে গ্রেপ্তার করা হয়।